Books
ই-বুক/অডিওবুক/বই - পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনটি বেশি উপকারী?
July 14, 2024, 11:15 p.m.
5 mins of reading
Metheela Farzana Melody

অনলাইন যুগ হওয়ায় বর্তমানে ই-বুক কিংবা অডিওবুক এর প্রচলন শুরু হয়েছে। কিন্তু হাতে ধরে বই পড়া আর অনলাইনে বই পড়া দুটোই কি এক হলো? বর্তমানে বইয়ের অনেক মাধ্যম বের হয়েছে। ই-বুক,পিডিএফ,অডিওবুক কি নেই? তবে প্রশ্ন হলো এদের মধ্যে কোন মাধ্যম শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী?

প্রথমেই আসি অডিওবুকের কথায়। বলে রাখি অডিওবুক জিনিসটা কি! অডিওবুক হলো আমাদের স্বাভাবিক বই এর মতোই, কিন্তু সম্পূর্ণটাই কারো কণ্ঠে শুনতে পারবেন, এর সাথে হয়তো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক থাকতেও পারে আবার নাও পারে। আমরা অনেকে নিয়মিত শ্রোতা না হলেও অডিওবুকের জনপ্রিয়তা কিন্তু দিন দিন বেড়েই চলছে। অডিওবুক এর মাধ্যমে বই পড়ার পাশাপাশি মোবাইলে কিংবা ল্যাপটপে অনায়াসেই অন্যান্য কাজ করা যায়। অর্থাৎ, বই পড়ার কারণে একাধারে ঘন্টাখানেক বসে থাকার বাধ্যবাধকতা নেই, মাল্টিটাস্কিং এর জন্য অনেক বড় সুবিধা এটি। এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী/অন্ধ ব্যক্তিদের জন্য খুবই সহজ উপায় হচ্ছে অডিওবুক। আবার অনেকের জন্য বাসে বসে কিংবা ভ্রমণের সময় বইয়ে মুখ গুজে থাকা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে ইয়ারফোনে অডিওবুক শুনতে শুনতে আরামসে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু এতো কিছু সুবিধার পরেও কোথাও একটা "কিন্তু" থেকেই যায়। হাতে ধরে বই পড়ার অনুভূতি আর অডিওবুকের স্পর্শহীন পড়ার অনুভূতি কি এক? অবশ্যই না। ঠিক এ জায়গাতে এসেই বুকওয়র্ম সমাজ এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। এছাড়া, অডিওবুক একেবারে না শুনলে গল্পটা ঠিক জমে নাহ। ফলস্বরূপ, একতানা দুই-তিন ঘন্তা অডিওবুক শুনতেই ব্যয় হয়। আবার, অডিওবুক সেভাবে সহজলভ্যও নয়। তাই সাধারণ মানুষের জন্য এফোর্ড করাতাও কিছু ক্ষেত্রে কঠিন। যেহেতু অডিওবুক আমরা ডিভাইসে শুনছি, তাই সেক্ষেত্রে ডিভাইস চার্জ করাও প্রয়োজন। আবার চার্জের জন্য ইলেকট্রিসিটিও প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে প্রত্যন্ত জায়গাগুলোতে অডিওবুক ক্যারি/বহন করাটাও চিন্তার বিষয়ও বটে।

এবার আসা যাক, ই-বুক এর কথায়। মহামারীর সময়ে স্কুল-কলেজ এর ক্লাস অনলাইন হওয়াতে ই-বুক কথাটা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহর সবার মোটামুটি ধারণা আছে। যদিও ই-বুক এর ধারণা অনেক আগেরই। কোনো বইয়ের হুবহু অনলাইন ভার্সন অর্থাৎ মোবাইলে/ট্যাবে/ল্যাপটপে/পিসিতে যেই বইগুলো আমরা পরে থাকি তা-ই হলো ই-বুক। প্রশ্ন হচ্ছে, ই-বুকের কাজটা কি হলো তাহলে?
ই-বুক হলো বইয়েরই অনলাইন ভার্সন। এককথায় যা আপনি হাতে নিয়ে পড়তেন, সেটাই মোবাইলে পড়তে পারবেন। আর ঠিক একাহ্নেই মেইন পেপারব্যাকের সাথে ই-বুক এর বিস্তর ফারাক। প্রথমত, ই-বুক মোবাইল/ট্যাব/ল্যাপটপ যেকোনটাতেই ক্যারি করা যায়, এবং তা আনলিমিটেড। অর্থাৎ একটি ডিভাইসেই আপনি ধারণক্ষমতা অনুযায়ী অসংখ্য ই-বুক ক্যারি করতে পারেন। পেনড্রাইভেও ক্যারি করে যেকোন ডিভাইসে পড়তেও পারবেন। আবার বইয়ের মতো অতিরিক্ত ভার বহনও করতে হচ্ছে নাহ, অল্প জায়গায় অনেক ডকুমেন্টস নেওয়ার অপশন থাকছে। তাই, ভ্রমণের ক্ষেত্রে এটি একটি বেস্ট অপশন। এছাড়া রাত হলেও অতিরিক্ত বাতি/আলো জ্বালানোরও প্রয়োজন পরে না, চিন্তাও থাকে না। কিন্তু ই-বুকের কি কোনও অসুবিধা নেই? অবশ্যই আছে। গবেষকরা যা নিয়ে চিন্তিত তা হলো, আমাদের স্বাস্থ্যঝুকি। দীর্ঘক্ষণ মোবাইল/যেকোনো ডিভাইসে তাকিইয়ে থাকার ফলে চোখের সমস্যা দেখা দেয়, মাথা ব্যাথা শুরু হয় অনেকের। দীর্ঘদিন ধরে এই অভ্যাস চলতে থাকলে চোখের সমস্যা চিরস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। যদিও, বেশ কিছু ডিভাইসে Reading Mode চালু হয়েছে, তবে এর চিরস্থায়ী কার্যকারিতা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে অনেকের। এছাড়া, ই-বুক আমাদের মানে পাঠকদের Shallow Reading/Non-Linear Reading এর দিকে ধাবিত করে। প্রশ্ন আসতে পারে, Shallow Reading কি! Shallow Reading মানে হচ্ছে যখন আপনি পড়ার চেয়ে ব্রাউজিং বা স্ক্যানিং বা স্ক্রলিং এ বেশি সময় ব্যয় করেন। অর্থাৎ আপনি পড়ছেন ঠিকই, কিন্তু মনোযোগটা ঠিক বইয়ের পাতায় থাকছে নাহ, একনাগাড়ে পড়ার যে স্পৃহা তা নেই। আবার, যেহেতু আধুনিক যন্ত্রে পরাশোনা করছেন, তাই চার্জ আবশ্যক। সেদিক থেকে বলতে হয়, ই-বুক ক্যারির পাশাপাশি পর্যাপ্ত চার্জ ও বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা আবশ্যক।

এ তো গেলো অডিওবুক এবং ই-বুকের কথা। এবার আসা যাক, আমদের চিরাচরিত দেখে আসা বই/পেপারব্যাক এর প্রসংগে। অনেককেই বলতে শোনা যায়, "নতুন বই হাতে পাওয়ার পর নতুন বইয়ের যে গন্ধ পাওয়া যায়, তাতেই একরাশ শান্তি" কতাহটা নেহাত মন্দ না। বই দেখলেও হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখতে মন চায়, তারপর একটু একতু করে পড়তে পরতে সম্পূর্ণ বই পরে শেষ করে ফেলা - সবই যেন কৈশোরের স্মৃতি অনেকের। ই-বুক কিংবা অডিওবুকের মতো চার্জিং ,ইলেকট্রিসিটি এসবের ঝুট-ঝামেলা নেই। বই পরার সময় ধ্যান থাকে সেই বইয়েই, অন্য কোন কিছু ব্রাউজিং বা স্ক্রলিং এর চঞ্চলতা নেই। তবে বইয়ের ক্ষেত্রে এখন বিজ্ঞানীরা যা আশংকা করছেন তা হচ্ছে পরিবেশে ভয়াবহ রকমের দুর্যোগ। কারণ বই তৈরীর জন্য কাগজ দরকার, কালি দরকার। কাগজ তৈরীর জন্য আবার গাছ দরকার। অতিরিক্ত গাছ কাটার ফলে পৃথিবীর পরিবেশ আজ কতটা ভয়াবহ দুর্যোগের মুখে তার তথ্য প্রতিনিয়ত সংবাদে মিলছে। তাই আপাতত, অধিকাংশ বিজ্ঞানীই বই তৈরীর পক্ষে না। আবার বই/কাগজ পচনেও পরিবেশ দূষণ হয়। এছাড়া আরও একটি অসুবিধা হলো, তা বহনে অসুবিধা। একতা বই-ই তুলনামূলকভাবে বেশি ওজনের হয়। যা ভ্রমণ কিংবা এম্নিতেও বহন করতে শক্তি, জায়গা অপচয় হয়। আবার বৃষ্টিতে বা একটু কিছুতেই ক্ষতির আশংকা থাকে। যার অর্থ হলো, বই বানাতেও যেমন শক্তি, প্রাকৃতিক উপাদান নষ্ট হয়, তেমনি এর ব্যবহারেও বা বহনেও সেরকম অসুবিধাও বিদ্যমান।

ঠিক এই পর্যায়ে এসে আপনার কি মনে হচ্ছে, কোনটি শিক্ষার্থীদের জন্য অধিক উপকারী - বই,অডিওবুক নাকি ই-বুক? সে যা-ই হোক, প্রত্যেকতা জিনিসেরই উপকারী এবং অপকারী দিক রয়েছে, কিন্তু একজন শিক্ষার্থী এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের পক্ষে যেটুকু আপডেট হওয়া যায়, সেটা যেন আমরা করি। আর আপনাদের ক্ষেত্রে ই-বুক,অডিওবুক,বই কোনটি উপকারী তা জানিয়ে দিন।