বেশ কিছু বছর আগেও আমাদের দেশে সহশিক্ষা কার্যক্রম এতটাও জোরদার ছিলো না। একাডেমিক রেজাল্ট ছিলো কর্মজীবনে সফল হওয়ার অন্যতম হাতিয়ার। কিন্তু বিশ্বায়নের সাথে সাথে ধ্যান-ধারণা অনেকটাই পালটে গিয়েছে। আগে যেমন বইয়ের পড়াটুকু অনেক গুরুত্ব সহকারে দেখা হত, এখন বইয়ের পড়ার পাশাপাশি স্কিল অথবা বইবহির্ভূত জ্ঞান ও দক্ষতাকে সমান গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। এখন বাংলাদেশ সরকার একটি নির্দিষ্ট অংশ পরিমাণ বাজেট স্কুল-কলেজের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।
সহশিক্ষা কার্যক্রম বা স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, যা-ই বলি না কেন, সবকিছুই আমাদের একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিকশিত করতে সহায়তা করে। এই সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামগুলো আসলে কী? একতু সহজ করে বলি। কো-কারিকুলার এক্টিভিটিস কিংবা সহশিক্ষা কার্যক্রম হলো আমাদের গতানুগতিক পড়াশুনার বাহিরে আমরা যেসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি, সেটা হতে পারে যেকোনো প্রতিযোগিতা, কুইজ, সাধারণ জ্ঞান, গান, নাচ, আবৃত্তি, অলিম্পিয়াড যেকোনো কিছু। সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ে, সাথে বাড়ে নিজের কমিউনিকেশন স্কিলসহ প্রব্লেম সল্ভিং এর দক্ষতা। আপাতদৃষ্টিতে সহশিক্ষা কার্যক্রমের উপকারিতা প্রথম দিকে চোখে না পড়লেও বর্তমানে এর ফলাফল অনেকটাই নজরকাড়া। তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে দেশের বাইরে পড়তে গেলে ভালো ভালো মোটামুটি সব বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলোতে পড়াশোনার পাশাপাশি ECA (Extra Curricular Activities) তে গুরুত্ব দেয়, এবং স্কলারশিপ পেতেও সহায়তা করে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও কি ব্যাপারটা এরকম। বেশি না, ছয় বছর আগেও প্রশ্নটি করলে উত্তরটি নেগেটিভ আসতো। কেননা, বাংলাদেশের পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কো-কারিকুলার এক্টিভিটিস এর খুব একটা কদর তেমন ছিলোই না। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলোয়াড় কোঠা এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক ভাবে পদকপ্রাপ্ত অলিম্পিয়াডের ক্ষেত্রে আলাদা নিয়ম চালু করায় ধারণা করা যায় খুব শীঘ্রয়ই বাংলাদেশও একটি র্যাপিড চেঞ্জের দিকে এগোচ্ছে।
এ তো গেলো সহশিক্ষা কার্যক্রমের কথা। এবার একটু বড়দের আলোচনায় আসা যাক। স্কিল ডেভেলপমেন্ট- বর্তমানে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত শব্দ। আলোচিত বলছি কারণ বিশ্বায়নের এই যুগে পড়াশোনা বা হাই সিজিপিএ থাকলেই তা যথেষ্ট না চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে, এখন প্রযুক্তির উত্তকর্ষ সাধনের পাশাপাশি সেই বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাওয়া চাই, তার উপর অর্গানাইজেশনাল স্কিল তো থাকছেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠলেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের যেমন ক্যারিয়ার নিয়ে ধারণা জন্মায়, তেমনি বাড়ে দায়িত্ববোধ এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আকাংক্ষা। চাকরিক্ষেত্রে আমাদের সিভি যখন দিতে হয় তখন সেই সিভি কি করে অন্য আর দশটা সিভি থেকে আলাদা ও উন্নত হবে তার প্রচেষ্টাই চলতে থাকে। সেই জায়গা থেকে বাড়তে থাকে বিভিন্ন ক্লাবে অংশগ্রহণ, কিংবা বিভিন্ন অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত হওয়া। কেন এই যুক্ত হওয়া? যাতে চাকরিতে কিংবা ব্যবসায় ঢুকার পূর্বেই একটি অর্গানাইজেশন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, নিজেকে সেভাবে গড়ে নেওয়া যায়। এছাড়া নিজের পূর্বলব্ধিত জ্ঞান যেন পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। সেক্ষেত্রে স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর ধারণা খুব বেশি পুরোনো না হলেও এই সেক্টরে অনেক অনেক পারদর্শী গাইড ও পরামর্শক দরকার। স্কিল ডেভেলপমেন্ট ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির ক্ষেত্রে পরিবর্তন হয়। যেমন- কারো কারো ক্ষেত্রে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর চাক্ষুষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দরকার। কারো ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন কিংবা কন্টেন্ট রাইটিং এ আগ্রহ বেশি। স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর আরও একটি মাধ্যম হচ্ছে। আর তা হলো- ইন্টার্নশিপ, যা পরবর্তীতে সিভিতে অভিজ্ঞতার কোঠা পূরণেও সহায়তা করে। বর্তমানে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েশনের আগে ইন্টার্ণ করা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে।
এ তো গেলো সহশিক্ষা কার্যক্রম ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর কথা, বাংলাদেশের কর্ম কিংবা শিক্ষাজীবনে এগুলোর কদর দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, সাথে পরিবর্তন হচ্ছে গতানুগতিক ধারার। সেক্ষেত্রে নিজেকে এগিয়ে নিতে, আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা স্টার্ট-আপ ও গড়ে উঠেছে পারদর্শী লোকের মাধ্যমে জ্ঞান ও দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করার জন্য। সেক্ষেত্রে নিজেকে উন্নত করে গড়ে তুলতে আগহ, ইচ্ছা এবং ক্ষমতা অনুযায়ী নিজের জন্য সঠিক ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া কিন্তু আমাদেরই দায়িত্ব।