Skill
ই-বকু / অডিওবকু / বই পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনটি বেশি উপকারী?
July 4, 2025, 1:08 p.m.
5 mins of reading
None

অনলাইন যুগ হওয়ায় বর্তমানে ই-বকু কিংবা অডিওবকু এর প্রচলন শুরু হয়েছে।কিন্তু হাতে ধরে বই পড়া আর অনলাইনে বই পড়া দুটোই কি এক হলো? বর্তমানে বইয়ের অনেক মাধ্যম বের হয়েছে। ই-বকু , পিডিএফ,অডিওবকু কি নেই? তবে প্রশ্ন হলো এদের মধ্যে কোন মাধ্যম শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী?

প্রথমেই আসি অডিওবকেু র কথায়। বলে রাখি অডিওবকু জিনিসটা কী! অডিওবকু হলো আমাদের স্বাভাবিক বই এর মতোই, কিন্তু সম্পূর্ণটাই র্ণ কারো কণ্ঠে শুনতে পাবেন, এরসাথে হয়ত ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক থাকতেও পারে আবার নাও পারে। আমরা অনেকে নিয়মিত শ্রোতা না হলেও অডিওবকেু র জনপ্রিয়তা কিন্তু দিন দিন বেড়েই চলেছে। অডিওবকু এর মাধ্যমে বই পড়ার পাশাপাশি মোবাইলে কিংবা ল্যাপটপে অনায়াসেই অন্যান্য কাজ করা যায়। অর্থাৎ, বই পড়ার কারণে একাধারে ঘণ্টাখানেক বসে থাকার বাধ্যবাধকতা নেই, মাল্টিটাস্কিং এর জন্য অনেক বড় সুবিধা এটি। এছাড়া দষ্টিৃ প্রতিবন্ধী/অন্ধ ব্যাক্তিদের জন্য খুবই সহজ উপায় হচ্ছে অডিওবক। ু আবার অনেকের জন্য বাসে বসে কিংবা ভ্রমণের সময় বইয়ে মখু গুজে থাকা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে ইয়ারফোনে অডিওবকু শুনতে শুনতে আরামসে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু এত কিছুসুবিধার পরেও কোথাও একটা কিন্তু থেকে যায়। হাতে ধরে বই পড়ার অনভুূতি আর অডিওবকেু র স্পর্শহীন পড়ার অনভুূতি কি এক? অবশ্যই না। ঠিক এ জায়গাতে এসেই বকওয় ু র্ম সমাজ এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। এছাড়া, অডিওবকু একেবারে না শুনলে গল্পটা ঠিক জমে না। ফলস্বরূপ, একটানা দইু-তিন ঘণ্টা অডিওবকু শুনতেই ব্যয় হয়। আবার, অডিওবকু সেভাবে সহজলভ্যও নয়। তাই সাধারণ মানষেু র জন্য এফোর্ড করাটাও কিছুক্ষেত্রে কঠিন। যেহেতুঅডিওবকু আমরা ডিভাইসে শুনছি, তাই সেক্ষেত্রে ডিভাইস চার্জ করাও প্রয়োজন। আবার চার্জের জন্য ইলেক্ট্রিসিটিও প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে প্রত্যন্ত জায়গাগুলোতে অডিওবকু ক্যারি করাটা চিন্তার বিষয়ও বটে।

এবার আসা যাক, ই-বকু এর কথায়। মহামারীর সময় স্কুল-কলেজ এর ক্লাস অনলাইন হওয়াতে ই-বকু কথাটা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহর সবার মোটামটিু ধারণা আছে। যদিও ই-বকু এর ধারণা অনেক আগেরই। কোনো বইয়ের হুবহু অনলাইন ভার্সন অর্থাৎ মোবাইলে/ ট্যাবে/ ল্যাপটপ/ পিসিতে যেই বইগুলো আমরা পড়ে থাকি তা-ই হলো ই-বক। ু প্রশ্ন হচ্ছে, ই-বকেু র কাজটা কী হলো তাহলে ?

ই-বকু হলো বইয়েরই অনলাইন ভার্সন। এক কথায় যা আপনি হাতে নিয়ে পড়তেন, সেটাই মোবাইলে পড়তে পারবেন। আর ঠিক এখানেই মেইন পেপারব্যাক এর সাথে ই-বকু এর বিস্তর ফারাক। প্রথমত, ই-বকু মোবাইল/ট্যাব/ল্যাপটপ যে কোনোটাতেই ক্যারি করা যায়, এবং তা আনলিমিটেড। অর্থাৎ, একটি ডিভাইসেই আপনি ধারণক্ষমতানযায়ী ু অসংখ্য ই-বকু ক্যারি করতে পারেন। পেনড্রাইভেও ক্যারি করে যেকোনো ডিভাইসে পড়তেও পারবেন। আবার বই এর মতো অতিরিক্ত ভার বহনও করতে হচ্ছে না,অল্প জায়গায় অনেক ডকুমেন্টস নেওয়ার অপশন থাকছে। তাই, ভ্রমণের ক্ষেত্রে এটি একটি বেস্ট অপশন। এছাড়া রাত হলেও অতিরিক্ত বাতি/আলোর প্রয়োজনও পড়ে না, চিন্তাও থাকে না। কিন্তু ই-বকু এর কি কোনো অসুবিধা নেই? অবশ্যই আছে। গবেষকরা যা নিয়ে চিন্তিত তা হলো, আমাদের স্বাস্থ্যঝুকি। দীর্ঘক্ষণ মোবাইল/ যেকোনো ডিভাইসে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের সমস্যা দেখা যায়, মাথা ব্যথা শুরু হয় অনেকের। দীর্ঘদিন ধরে এই অভ্যাস চলতে থাকলে চোখের সমস্যা চিরস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। যদিও, বেশ কিছুডিভাইসে Reading Mode চালুহয়েছে, তবে এর চিরস্থায়ী কার্যকারিতা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে অনেকের। এছাড়া, ই-বকু আমাদের মানে পাঠকদের Shallow Rading/ Non-linear Reading এর দিকে ধাবিত করে। প্রশ্ন আসতে পারে, Shallow Reading কি! Shallow Reading মানে হচ্ছে যখন আপনি পড়ার চেয়ে ব্রাউজিং কিংবা স্ক্যানিং বা স্ক্রলিং এ বেশি সময় ব্যয় করে। অর্থাৎ, আপনি পড়ছেন ঠিকই, কিন্তু মনযোগটা ঠিক বইয়ের পাতায় থাকছে না, একনাগাড়ে পড়ার যে স্পহা ৃ তা নেই। আবার, যেহেতুআধুনিক যন্ত্রে পড়াশোনা করছেন, তাই চার্জ আবশ্যক। সেদিক থেকে বলতে হয়, ই-বকু ক্যারি করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত চার্জ ও বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা আবশ্যক।

এ তো গেলো অডিওবকু এবং ই-বকু এর কথা। এবার আসা যাক, আমাদের চিরচরিত দেখে আসা বই/পেপারব্যাক এর প্রসংগে। অনেককেই বলতে শুনা যায়, “নতুন বই হাতে পাওয়ার পর নতুন বইয়ের যে গন্ধ পাওয়া যায়, তাতেই একরাশ শান্তি।” কথাটা নেহাত মন্দ বলে না। বই দেখলেও হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখতে মন চায়, তারপর একটুএকটুকরে পড়তে পড়তে সম্পূর্ণ বই পড়ে শেষ করে ফেলা- সবই যেন কৈশোরের স্মৃতি অনেকের। ই-বকু কিংবা অডিওবকু এর মতো চার্জিং, ইলেক্ট্রিসিটি এসবের ঝুট ঝামেলা নেই। বই পড়ার সময় ধ্যান থাকে সেই বইয়েই, অন্য কোনো কিছুব্রাউজিং বা স্ক্রলিং এর চঞ্চলতা নেই। তবে বই এর ক্ষেত্রে এখন বিজ্ঞানীরা যা আশংকা করেন তা হচ্ছে পরিবেশে ভয়াবহ রকমের দর্যূ র্যোগ। কারণ বই তৈরির জন্য কাগজ দরকার, কালি দরকার। কাগজ তৈরির জন্য আবার গাছ দরকার। অতিরিক্ত গাছ কাটার ফলে পৃথিবীর পরিবেশ আজ কতটা ভয়াবহ দর্যূ র্যোগের মখেু তার তথ্য প্রতিনিয়ত সংবাদে মিলছে। তাই আপাতত, অধিকাংশ বিজ্ঞানীই বই তৈরির পক্ষে না। আবার বই বা কাগজ পচনেও পরিবেশ দষনূ হয়। এছাড়া, আরও একটি অসুবিধা হলো, তা বহনে অসুবিধা। একটা বই-ই তুলনামলকভা ূ বে বেশি ওজন হয়। যা ভ্রমণ কিংবা এম্নিতেও বহন করতে শক্তি, জায়গা অপচয় হয়। আবার বষ্টিৃ তে কিংবা একটুকিছুতেই ক্ষতির আশংকা থাকে। যার অর্থ হলো, বই বানাতেও যেমন শক্তি, প্রাকৃতিক উপাদান নষ্ট হয়, তেমনি এর ব্যবহার কিংবা বহনেও সেরকম অসুবিধাও বিদ্যমান।

ঠিক এই পর্যায়ে এসে আপনার কি মনে হচ্ছে, কোনটি শিক্ষার্থীদের জন্য অধিক উপকারী- বই, অডিওবকু নাকি ই-বকু ? সে যা-ই হোক, প্রত্যেকটা জিনিসেরই উপকারী এবং অপকারী দিক রয়েছে। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে যেটুকু আপডেট হওয়া যায়, সেটা যেন আমরা করি। আর আপনাদের ক্ষেত্রে, ই-বকু , বই, অডিওবকু কোনটি উপকারী তা জানিয়ে দিন।

তথ্যসূত্রঃ Freereads, Flipsnack, Goodreads. Urban Writers etc